একদা বৃন্দাবনের গোবর্ধন পাহাড়ের নিচে বসবাস করতেন কৃষ্ণ। সেই সময় গোবর্ধন পাহাড়ের অধিপতি ছিলেন ইন্দ্রদেব। ইন্দ্রদেব প্রতি বছর পাহাড়বাসীদের কাছ থেকে পূজা গ্রহণ করতেন এবং বর্ষণ করে তাদের শস্য উত্পাদন সমৃদ্ধ করতেন। কিন্তু কৃষ্ণ লক্ষ্য করেন যে, ইন্দ্রদেব অহংকারে পূর্ণ এবং তাঁর এই পূজা পাওয়ার দাবি একপ্রকার অত্যাচার।
কৃষ্ণ একদিন গ্রামের মানুষের কাছে গিয়ে বলেন, “আমাদের প্রকৃত দেবতা হল গোবর্ধন পাহাড়, কারণ এ পাহাড় আমাদের শস্য দেয়, পশুর খাদ্য যোগায়, এবং আমাদের জল সরবরাহ করে। আমাদের উচিত ইন্দ্রদেবের পরিবর্তে এই পাহাড়কে পূজা করা।”
গ্রামবাসীরা কৃষ্ণের কথায় রাজি হয়ে গোবর্ধন পাহাড়ের পূজা শুরু করেন। এতে ইন্দ্রদেব ক্রুদ্ধ হন এবং ভীষণ ঝড়-বৃষ্টির মাধ্যমে গ্রামবাসীদের শাস্তি দিতে আসেন। ইন্দ্রদেব সাতদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি করতে থাকেন, যাতে গোবর্ধনবাসীরা ভেসে যায়। কিন্তু কৃষ্ণ নিজের কনিষ্ঠ আঙুলে গোবর্ধন পাহাড়কে তুলে ধরেন, যাতে গ্রামবাসীরা পাহাড়ের নিচে আশ্রয় নিতে পারেন।
সাতদিন পর ইন্দ্রদেব বুঝতে পারেন কৃষ্ণ একজন সাধারণ মানুষ নন, তিনি স্বয়ং ঈশ্বরের অবতার। তিনি কৃষ্ণের কাছে ক্ষমা চান এবং তাঁর অহংকার ত্যাগ করে আশীর্বাদ দেন। কৃষ্ণ ইন্দ্রদেবকে শান্ত করেন এবং বোঝান যে প্রকৃত ভক্তি হলো প্রকৃতির সেবা ও সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা।
এই কাহিনী থেকে বোঝা যায় যে, প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সম্মান আমাদের মানবিকতার অংশ, এবং অহংকার কখনও কারো মঙ্গল বয়ে আনে না।