একদা দ্বারকা নগরীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শাসন চলছিল। তিনি ছিলেন একাধারে রাজা, প্রভু ও পরামর্শদাতা। তাঁর প্রজ্ঞা, দয়া, এবং ন্যায়বিচার তাঁর প্রজাদের কাছে অনন্য ছিল। একদিন এক গরিব ব্রাহ্মণ শ্রীকৃষ্ণের দরবারে এসে খুব দুঃখ প্রকাশ করতে লাগলেন। ব্রাহ্মণের মুখ বিষণ্ণ ছিল, চোখে জল, এবং শরীর কাঁপছিল দুঃখে।
শ্রীকৃষ্ণ ব্রাহ্মণকে শান্তভাবে বললেন, “তোমার কী দুঃখ, ব্রাহ্মণ? আমার কাছে বলো, আমি তোমার জন্য কী করতে পারি?”
ব্রাহ্মণ কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “প্রভু, আমি বহু কষ্ট করে সাতটি সন্তানকে লালন-পালন করেছি, কিন্তু প্রত্যেকটি সন্তান জন্মের সাথে সাথেই মারা গেছে। এখন আমার স্ত্রী আবার গর্ভবতী, কিন্তু আমি ভীত, আমার এই সন্তানও হয়তো বাঁচবে না। আমার অন্যায় কী? কেন আমার পরিবারের ওপর এমন দুর্ভোগ নেমে আসছে?”
শ্রীকৃষ্ণ ব্রাহ্মণকে শান্ত করে বললেন, “ব্রাহ্মণ, তোমার দুঃখ আমি বুঝতে পারছি। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, এইবার আমি নিজে তোমার সন্তানের জন্মের সময় উপস্থিত থাকব এবং দেখব কী ঘটছে।”
সময় এল, এবং ব্রাহ্মণের স্ত্রী সন্তান জন্ম দিতে চলেছেন। শ্রীকৃষ্ণ সেখানে উপস্থিত হলেন, কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলো না। শিশুটি জন্ম নিতেই তা অদৃশ্য হয়ে গেল। শ্রীকৃষ্ণ বিস্মিত হলেন এবং নিজেই এর কারণ খুঁজতে অঙ্গীকার করলেন। তিনি ব্রাহ্মণের সন্তানের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য এক মহাপরিকল্পনা করলেন।
শ্রীকৃষ্ণ তাঁর রথে চড়ে অর্জুনকে সাথে নিয়ে স্বর্গলোকের পথে যাত্রা করলেন। শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন প্রথমে ইন্দ্রলোক গেলেন, তারপর যমরাজের অধীনস্থ যমলোকে, কিন্তু কোথাও ব্রাহ্মণের সন্তানদের কোনো হদিস পেলেন না। তাঁরা অবশেষে ব্রহ্মাণ্ডের শেষ প্রান্তে গিয়ে মহাকাল মহাদেবের রাজ্যে পৌঁছালেন। সেখানে দেখা গেল, মহাকাল নিজের ইচ্ছায় সেই শিশুগুলোকে নিয়ে গিয়েছেন।
মহাকাল শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে বললেন, “প্রভু শ্রীকৃষ্ণ, আমি জানতাম আপনি একদিন আমার কাছে আসবেন। আমি এই ব্রাহ্মণের সন্তানদের আমার কাছে রেখেছিলাম কারণ আপনি স্বয়ং এই শিশুগুলোর মুক্তি দিতে আসবেন। এরা পূর্বজন্মের মহাপাপী, যারা আপনার দর্শন ও আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। এখন আপনি এদের মুক্তি দিয়ে স্বর্গলোকে নিয়ে যান।”
শ্রীকৃষ্ণ মহাকালের কাছে প্রণাম করে সন্তানগুলোকে মুক্তি দিলেন এবং ব্রাহ্মণের কাছে ফিরে এনে তাঁদের জীবিত করলেন। ব্রাহ্মণ কৃতজ্ঞতায় ভরপুর হয়ে শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করলেন এবং আশীর্বাদ কামনা করলেন।
এই গল্প থেকে বোঝা যায়, শ্রীকৃষ্ণের করুণা এবং ন্যায়বিচার সর্বত্র বিস্তৃত, এবং যেকোনো দুর্ভোগের পেছনে রয়েছে একটি মহৎ কারণ, যা ঈশ্বরের ইচ্ছার বাইরে নয়। আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে যে, সব সমস্যার সমাধান একদিন হবে এবং ঈশ্বরের পরিকল্পনা সবসময়ই মঙ্গলের জন্য।